সর্বশেষ

রাজাপাকসেদের তোষণে উল্টো ফল চীনের

বিশ্নেষণ-শ্রীলঙ্কা সংকট

প্রকাশ :


/ শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার পাহারায় সেনারা এএফপি /

২৪খবরবিডি: 'শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালালে চীনা দূতাবাস কোনো বিবৃতি প্রকাশ কিংবা একটি টুইটও করেনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বেইজিং। ফরাসি দূতাবাস তো শ্রীলঙ্কার ঘটনাকে ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করে একটি টুইটও রিটুইট করেছে। তবু বেইজিং নীরব। বস্তুত, শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে  সরকারের পতন চীনের আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।'

রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যরা অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শ্রীলঙ্কায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের মাহিন্দা রাজাপাকসে ও গোটাবায়া রাজাপাকসে। তাঁরা উভয়েই প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ডন ডেভিড রাজাপাকসের নাতি। শ্রীলঙ্কা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ থাকার সময় ডন ডেভিড শক্তিশালী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। রাজাপাকসেদের বাবা স্বাধীনতার পর শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। এই পরিবারের আরও অনেক সদস্য সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। পরিবারটি বর্তমান শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে দেশটির রাজনৈতিক ক্ষমতা কার্যত কুক্ষিগত করে রেখেছে। দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে পরিবারটির নাম।

-সাধারণভাবে শ্রীলঙ্কা এবং বিশেষ করে রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। চীনের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম কমিউনিস্টবহির্ভূত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা অন্যতম। প্রায় দেড় দশক আগে মাহিন্দা রাজাপাকসের শাসনমালে তাঁর ভাই সদ্য পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সে সময় ফিল্ড মার্শাল সারাথ ফনসেকার সঙ্গে তামিল টাইগারদের পরাজিত করার অভিযানে মূলত চীনই অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।

'তামিলদের বিরুদ্ধে অভিযানে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের ব্যবহার এবং নৃশংসতার কথা জাতিসংঘে উত্থাপিত হলে চীন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক বিবৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টাকেও আটকে দেয়। তামিলদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রকাশ্যে চীনকে ধন্যবাদ জানান যুদ্ধে সহায়তার জন্য।'

-চীনের বিনিয়োগে শ্রীলঙ্কা যতটা না লাভবান হয়েছে, তার চেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। চীনা কূটনীতিতে এটি অস্বাভাবিক নয়। চীনা নেতারা প্রায়ই সুশীল সমাজ বা বৃহত্তর জনসাধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুযোগ উপেক্ষা করে অভিজাত ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। পাপুয়া নিউগিনির নেতাদেরও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়েছেন। ছোট দেশের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাকে কাজে লাগিয়ে আলোচনায় বিশেষ সুবিধা আদায় করে নেয় বেইজিং। চীনা নেতারা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়।
 

রাজাপাকসেদের  তোষণে  উল্টো  ফল  চীনের

'মাহিন্দা রাজাপাকসের ২০১৫ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চীনা করপোরেশন থেকে অন্তত ৭৬ লাখ ডলার দেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কায় চীনা রাষ্ট্রদূত এমনকি মাহিন্দাকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের কাছে প্রকাশ্যে আবেদন জানিয়েছেন।'

'শ্রীলঙ্কার ঘটনা এ অঞ্চলে চীনা উচ্চাভিলাষের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রতিবাদকারীরা রাজাপাকসে পরিবারকে কতটা তীব্রভাবে ঘৃণা করে তা বিবেচনা করে, নতুন সরকার সম্ভবত এই পরিবার এবং তাদের অবস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চাইবে। এতে বিপদে পড়তে পারে চীন। শ্রীলঙ্কায় চীনা বিনিয়োগ এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফরেন পলিসিতে মার্কিন গবেষক মাইকেল রাওয়ান্ডের নিবন্ধ।' 

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত